
গুলতাজ বেগম
(তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্থিরচিত্র দেওয়া হলো না, কারণ এতে তাঁর সম্মতি ছিল না। তাঁর প্রজন্মের সম্ভ্রান্ত মহিলাদের জন্য এই আচরণ সুপ্রচলিত ছিল। )
স্থিরচিত্র অঙ্কনে: ইয়াওয়ার শামস
গুলতাজ মেমোরিয়াল স্কুল ও কলেজ – এর নামকরণ প্রতিষ্ঠাতা জামালউদ্দীন আহমেদের মায়ের সম্মানে করা হয়েছে।
গুলতাজ মেমোরিয়াল স্কুল ও কলেজ – এর শুরু বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বলা যেতে পারে। তখন গুলতাজ বেগম নামে এক ১২ বছর বয়সী মেয়ে নববধু হিসেবে দৌলতপুত গ্রামে আসে। ফজলুল করিম নামে এক ডাক্তারির ছাত্রের সাথে তাঁর বিয়ের সূত্রে আগমন। ডাঃ ফজলুল করিম জনাব আবদুল জব্বার ও আজিজা খাতুনের সবচাইতে বড় ছেলে। পরবর্তীতে ডাঃ ফজলুল করিম ও গুলতাজ বেগমের সংসারে আটটি ছেলেমেয়ে আসে, কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক মর্মান্তিক ঘটনার ফলে এই পরিবারটির জীবনে গভীর সঙ্কট নেমে আসে। ১৯৪০-এর দশকে এঁদের বড় মেয়ের মৃত্যু ঘটে এবং ১৯৪৫ সালে ডাঃ ফজলুল করিমেরও জীবনের সমাপ্তি ঘটে। সাতটি সন্তান নিয়ে – এদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট সন্তানের বয়স তখন মাত্র ছয় মাস – বিধবা গুলতাজ বেগম বুঝতে পারলেন এই অবর্ণনীয় দুঃসময় থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে এবং জীবনে এগিয়ে চলতে হলে একটাই পথ রয়েছে – সন্তানদের লেখাপড়া সুনিশ্চিত করা। তিনি ঠিক তাই করলেন। তাঁর বড় ছেলে ডাঃ কামালঊদ্দীন আহমেদ একজন অসাধারণ ডাক্তার ছিলেন, তিনি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ফার্মাকোলজিস্টদের একজন। তাঁর দ্বিতীয় ছেলে জনাব জামালউদ্দীন আহমেদ বৃটিশ সনদপ্রাপ্ত সুপ্রসিদ্ধ চার্টার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্ট। বেসরকারী ও সরকারী উভয় ক্ষেত্রে জনাব জামালউদ্দীন আহমেদ কর্মজীবনে উজ্জ্বল কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৭৬ সালে তিনি চট্টগ্রাম (চট্টগ্রাম-৪) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। চট্টগ্রাম জেলা থেকে তিনিই প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশ সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ অলঙ্কৃত করেন।
১৯৯০ সালে জনাব জামালউদ্দীন আহমেদ এবং তাঁর স্ত্রী রোজী আহমেদ ব্যক্তিগত অর্থায়নে গুলতাজ মেমোরিয়াল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তাঁরা স্কুলের জমি ক্রয় করে বর্তমান স্কুলের দালান নির্মাণ করেন। গুলতাজ মেমোরিয়াল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার গোড়া থেকেই জনাব জামালউদ্দীনের ছোট ভাই জনাব আলী করিম এবং নিকটাত্মীয় ব্যারিস্টার সাইফুদ্দীন মাহমুদ, জনাব সোহরাব জব্বার ও জনাব শওকত হোসেন স্কুলের নানান কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং পরিচালনা পরিষদের গুরুত্বপুর্ণ পদে কাজ করেছেন। বর্তমানে তাঁর দুই কন্যা সারা আহমেদ আবেদিন এবং গুলতাজ শিরীন রহমান গুলতাজ মেমোরিয়াল স্কুল ও কলেজের পরিষদের নেতৃস্থানীয় সদস্য।
