
সারা আহমেদ আবেদীন
সারা আহমেদের জন্ম ১৯৬৫ সালে চট্টগ্রাম মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে। তিনি গুলতাজ মেমোরিয়াল স্কুল ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা জনাব জামাল উদ্দীন আহমেদ ও রোজী আহমেদের বড় মেয়ে।
সারার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বাংলাদেশে। ঢাকার হোলি ক্রস স্কুল থেকে মানবিক বিভাগ থেকে ১৯৮১ সালে মাধ্যমিক ও ইউনিভার্সিটি উইমেন্স ফেডারেশন কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগ থেকে ১৯৮৩ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ্যাকাউন্টিং বিভাগে এক সেমিস্টার পড়াশোনার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য যান। তিনি ইস্টার্ন মিশিগান ইউনিভার্সিটি থেকে accounting information systems-এ বিবিএ ডিগ্রি এবং জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে electronic business-এ এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন। তার বেশ কয়েকটি পেশাদারী সনদ রয়েছে।
সারা পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি ও সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ। বেসরকারী ও সরকারী উভয় খাতে সারার জটিল, দ্রুতপরিবর্তনশীল কর্মক্ষেত্রে বিশদ নেতৃত্ব ও পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি মিশিগান অঙ্গরাজ্যের অফিস অফ দ্য অডিটর জেনারেল-এ তথ্যপ্রযুক্তি অডিটর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর ৩০ বছর নানা পদে বড় বড় আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করেছেন – এর মধ্যে KPMG¸ Financial Industry Regulatory Authority (FINRA), NASDAQ Stock Market, IBM অন্তর্ভুক্ত। কোম্পানির ভেতরে ও বাইরে তথ্যপ্রযুক্তি অডিটের অভিজ্ঞতা ছাড়াও সারা IT security, cybersecurity, enterprise governance, risk, compliance ও privacy-এই সব ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ।
সারা BreaktheTide নামে যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত অলাভজনক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও। BreaktheTide নারী, শিশু ও প্রান্তিক সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নের জন্য অর্থ সংগ্রহে সহায়তা করে। তিনি চট্টগ্রামের দৌলতপুরে অবস্থিত গুলতাজ মেমোরিয়াল স্কুল ও কলেজের বোর্ডের সদস্য।
মানবতাবাদী বহু মানুষের বড় বড় কাজ সারাকে প্রভাবিত করেছে। এঁদের মধ্যে কেউ তার নিকট পরিবারের সদস্য, আবার আরো অনেকের জীবনের কীর্তি তাকে ছোটবেলা থেকেই অনুপ্রাণিত করেছে। নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে উদ্যোগ দেখবার অভিজ্ঞতা তাঁর প্রথম ঘটে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের নরসিংদীর একটি গ্রামে – এখানে তিনি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পান। (গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠাতা ডঃ মুহম্মদ ইউনুসের সাথে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার লাভ করে। ) এই অভিজ্ঞতা তার মনে স্থায়ী ছাপ রাখে এবং তাঁর মনে এই দৃঢ় বিশ্বাসের জন্ম দেয় যে একটু সহায়তা পেলে যে কোন মানুষ তার আপন সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিয়ে জীবনে সাফল্য অর্জন করতে পারে।
সারা লারা ও এ্যারনের গর্বিত মা। ওরা এখন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। সারার আশা, ওরা যখন শিক্ষা সমাপ্ত করে নিজেদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করবে, তখন ওদের নানা ও নানী জামাল ঊদ্দীন আহমেদ ও রোজী আহমেদের সমাজসেবা, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও অপরের ক্ষমতায়নের গৌরবোজ্জ্বল উত্তরাধিকারের সুযোগ্য প্রতিনিধিত্ব করবে।

গুলতাজ শিরীন রহমান
গুলতাজ শিরীনের জন্ম ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালে। তিনি গুলতাজ মেমোরিয়াল স্কুল ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা জনাব জামাল ঊদ্দীন আহমেদ ও রোজী আহমেদের ছোট মেয়ে।
গুলতাজ ঢাকার হোলি ক্রস স্কুল ও কলেজ থেকে যথাক্রমে ১৯৮২ ও ১৯৮৪ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ডিস্টিংশনসহ উত্তীর্ণ হন। এরপর তাঁর যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার সৌভাগ্য হয়। সেখানে তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে অবস্থিত Johnson Space Center-এ Space Shuttle Program-এ অত্যন্ত সফল কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। স্পেস শাটল প্রোগ্রামে কুড়ি বছরেরও দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি জুনিয়র স্পেস শাটল সফটওয়্যার বিশ্লেষক হিসেবে কাজ শুরু করার পর ধীরে ধীরে আরো দায়িত্বশীল পদে কাজ করেন। অবশেষে onboard flight navigation controller হিসেবে ৫০টি মহাকাশ অভিযানে সফলভাবে সহায়তা করেন। এইসব অভিযানে মূল নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র Mission Control Center-এ অভিযান চলাকালীন সময়ে তিনি তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান করেন। ২০১১ সালে শাটল কার্যক্রমের সমাপ্তির পর তিনি খনিজ তেল ও গ্যাস শিল্পে কর্মস্থল পরিবর্তন করেন । তিনি Baker Hughes নামে খনিজ তেল পরিষেবা কোম্পানিতে ১০ বছর ব্যবসায় উৎকর্ষ পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। সেখানে তিনি তেলখনি পরিষেবা ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, মানরক্ষা এবং যথাযথ নিয়মমান্য করার ব্যাপারে পদ্ধতিগত উন্নয়নে নজর দেন।
গুলতাজের পরম সৌভাগ্য নারীর অধিকারে বিশ্বাসী এমন বাবা-মায়ের ঘরে তাঁর জন্ম, যারা সারাজীবন সর্ববিষয়ে তাঁকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন। এঁরা তাঁকে শিক্ষা, সাহস, নীতিপরায়ণতা, বিনয়ের মূল্য সম্বন্ধে সচেতন করেছেন, ন্যায় ও ব্যক্তিগত/ সামাজিক দায়িত্বের ব্যাপারে সুগভীর ও অনড় আনুগত্যের শিক্ষা দিয়েছেন। এঁরা বরাবর তাঁকে নিজের সাধ ও স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন, নিজের আত্মবিশ্বাস ও মূল্যবোধ বিকাশে অনুপ্রাণিত করেছেন, তবে সেই সাথে এই বোঝাপড়াটিও পরিষ্কার ছিল যে তাঁকে স্বাবলম্বী, স্বাধীন হতে হবে এবং অর্থনৈতিকভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। পুরুষশাসিত সমাজ ও সংস্কৃতিতে এইরকম প্রগতিশীল স্বপ্নদর্শী বাবা-মায়ের ঘরে বড় হওয়া পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। এই সমর্থন তাঁকে নিজের ব্যাপারে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য স্থাপনে সাহস যুগিয়েছে, নারী হবার কারণে তাঁকে কোনরকম সীমা বা অনীহার সম্মুখীন হতে হয়নি। জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে এই মূল্যবান শিক্ষা তাঁকে জীবনের নানান ব্যক্তিগত বাধা ও বিপর্যয় অতিক্রম করার প্রস্তুতি দিয়েছে। আজও সেই শিক্ষা তাঁকে আজকের নানান পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহস ও আত্মবিশ্বাস যোগায়, যার ফলে তিনি নির্ভয়, আশাবাদী হতে পারেন।
তাঁর জীবনের সবচাইতে বড়ো প্রাপ্তি তার দুই যমজ সন্তান শন ও শীনা রহমান। ওদের জন্ম ১৯৯৪ সালে। ওরা ধীরে ধীরে জীবনে নিজের পথ তৈরি করে নিচ্ছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে তাঁর আকুল প্রার্থনা ওরা যেন তাঁর আশা পূরণ করে, বড় হয়ে সব সময় সকলের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্য কামনা করে, এমন একটা সমাজের পক্ষে কাজ করে যেখানে সবার ঠাঁই হয়, যেখানে সকলে সম্মান, দয়াশীলতা, মমতা, আর পারস্পরিক সমঝোতার মধ্যে থাকে, যেখানে সমাজ শঙ্কামুক্ত ও বিভেদশূন্য। জীবনে সুযোগের সাথে দায়িত্বও আসে, এই কথাটা ওরা বোঝে। গুলতাজের বাবা-মায়ের মেয়ের কাছে অনেক যেমন অনেক প্রত্যাশা ছিল, গুলতাজের নিজের সন্তানদের কাছে সেটা বেশি বই কম নয়। ওঁর কামনা, যেন তার প্রিয়তম বাবা-মা জামাল ও রোজী আহমেদের ঐতিহ্যকে প্রতিটি প্রজন্ম – তারা যে যেখানেই থাকুক না কেন – আরো এগিয়ে নিয়ে যায়, এবং এইভাবে তাঁদের স্বপ্ন ও জনসেবার চেতনাকে আরো সার্থক করে তাঁদের জন্য আরো সম্মান বয়ে আনে।
