লক্ষ্মী রানী চৌধুরী
সহকারী প্রধান শিক্ষক, গুলতাজ মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ

সবাইকে নমস্কার
আজকে আমি এক অত্যন্ত আবেগপ্রবণ মুহূর্তে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আগামী মাসে আমি আমার দীর্ঘ কর্মজীবনের ইতি টানতে যাচ্ছি এবং অবসর গ্রহণ করতে যাচ্ছি। এই দীর্ঘ সময়ের যাত্রায় আমার সঙ্গে থাকার জন্য, সমর্থন দেওয়ার জন্য এবং প্রতিটি দিনকে বিশেষ করে তোলার জন্য আপনাদের প্রতি আমার অন্তরের গভীর থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই।

প্রথম যখন আমি এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করি (০১/০৪/১৯৯৭ ইং) তখন আমি একেবারে নতুন ছিলাম। সেই প্রথম দিনগুলোতে আমি কতটা উদ্বিগ্ন ছিলাম তা এখনো স্পষ্ট মনে আছে। কিন্তু আপনারা, আমার সহকর্মীরা আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন, আমাকে শিখতে সহায়তা করেছেন এবং আমাকে একজন সদস্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন। সেই সময় থেকেই আমি এখানে কেবল একটি কাজই পাইনি বরং একটি পরিবারও পেয়েছি।

আমি ০১/০৪/১৯৯৭ ইং তারিখ সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করি। কিন্তু শ্রদ্ধেয় সভাপতি মহোদয় জনাব ব্যারিস্টার সাইফুদ্দিন মাহমুদ আমাকে (০৭/০৩/১৯৯৮ – ১০/০৯/১৯৯৯ ইং) তারিখ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করেছেন। আমি নিজের চেষ্টায় এবং সহকর্মীদের সহায়তায় এই গুরু দায়িত্ব পালন করেছি। এই ধরনের অভিজ্ঞতাগুলো আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে একসাথে কাজ করতে হয়, একে অপরকে সমর্থন করতে হয় এবং সব সময় উন্নতির চেষ্টা করতে হয়।

আমার কর্মজীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের একক অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান। তিনিই এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা যখন আমি জানতে পারলাম তখন গর্ভে আমার মন ভরে যায়। উনাকে স্বচক্ষে দেখার জন্য আগ্রহ জাগে। ০১/০২/১৯৯৮ ইং সালে তিনি প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক কর্মচারীকে এমপিও ভুক্ত করেন। এত কম সময়ে আমার মনে হয় কোন প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্ত করতে পারে নাই। উনি এমন একজন সব ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। ১৯৯৯ ইং সালে এস.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ তিনজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের হাতে স্বর্ণপদক দিয়ে পুরস্কৃত করেন। শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল এবং বিদ্যালয়ের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা তিনি খুব পছন্দ করতেন। তিনি বিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক মন্ডলীতে সুন্দর দিক নির্দেশনা দিতেন। এই অভিজ্ঞতাগুলো আমাকে শুধু পেশাগত দক্ষতায় সমৃদ্ধ করেনি বরং ব্যক্তি হিসেবে আমাকে আরো উন্নত করেছে।

প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, কারণ এই প্রতিষ্ঠান আমাকে একটি প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে যেখানে আমি আমার দক্ষতা বিকশিত করতে পেরেছি এবং আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। আমি আশা করি, ভবিষ্যতেও এই প্রতিষ্ঠান উন্নতির শিখরে পৌঁছাবে এবং নতুন নতুন উচ্চতা স্পর্শ করবে। আমার সহকর্মীদের প্রতি আমি বিশেষ কৃতজ্ঞ, আমারা একসাথে হাসি-দুঃখ ভাগাভাগি করেছি এবং একে অপরকে উৎসাহিত করেছি, আমরা সহকর্মী নই আমরা বন্ধু হয়েছি। এই বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতা আমি সবসময় স্মরণ করব।

আমি বিশেষভাবে শ্রদ্ধার সাথে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার শ্রদ্ধেয় অত্র প্রতিষ্ঠানের ( গুলতাজ মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ) প্রতিষ্ঠাতা মহোদয়ের কন্যাদ্বয়, শ্রদ্ধেয়া সারা আহমেদ আবেদিন ম্যাডাম ও শ্রদ্ধেয়া গুলতাজ শিরিন আহমেদ ম্যাডামকে। আপনারা এমন সময়ে অত্র প্রতিষ্ঠানের দিকে হাত বাড়িয়েছেন এবং সুনজর দিয়েছেন যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়। আপনারা আসার পর অত্র প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তির পরিবর্তন আসতেছে। আপনারা আরো আন্তরিকভাবে সুনজর দিলে এই প্রতিষ্ঠান আমূল পরিবর্তন হবে বলে আমি মনে করি।

আমার পরিকল্পনা অবসর জীবনের সময়টা আমি পরিবারের সাথে কাটাবো
পরিশেষে গুলতাজ মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রতি রইল আমার শুভকামনা

দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায়, রইল না রইল না
সে যে আমার হারিয়ে যাওয়া নানান রঙের দিনগুলি।